শ্রীকৃষ্ণকীর্তন
● সূচনা:- চর্যাপদ যেমন প্রাচীন যুগের প্রথম ও একমাত্র সাহিত্যিক নিদর্শন , তেমনি মধ্যযুগের প্রথম সাহিত্যিক নিদর্শন হলো বড়ু চন্ডীদাসের " শ্রীকৃষ্ণকীর্তন"।মধ্যযুগের বাংলা ভাষার আদি নিদর্শন হিসেবে এই গ্রন্থের একটি ঐতিহাসিক মর্যাদা সর্বজনস্বীকৃত।ষোড়শ শতাব্দীতে বা তার আগে বৈষ্ণব সাহিত্যের যে প্রসার তার প্রথম অঙ্কুর এই শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য।
● আবিষ্কার:- প্রাচীন বাংলা সাহিত্যের সাহিত্যের জহুরী বসন্তরঞ্জন রায় বিদ্বদ্বল্লভ শ্রীকৃষ্ণকীর্তন পুঁথি আবিষ্কার করেন ১৯০৯ খ্রি:, বাংলা ১৩১৬ সালে।বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুরের কাছাকাছি কাঁকিল্যা গ্রাম নিবাসী শ্রীনিবাসন আচার্যের দৌহিত্র বংশধর শ্রীদেবেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের গোয়ালঘরের মাচা থেকে।
● প্রকাশ:- ১৯১৬ খ্রি: বসন্তরঞ্জন রায় বিদ্বদ্বল্লভ এর সম্পাদনায় বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে থেকে " শ্রীকৃষ্ণকীর্তন" গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়।
● পুঁথিপরিচয়:-
¤ বসন্তরঞ্জন রায় বিদ্বদ্বল্লভ আবিস্কৃত শ্রীকৃষ্ণকীর্তন এর পুঁথিটি এই কাব্যের একমাত্র অখন্ড পুঁথি।
¤ পুঁথিটি প্রাচীন বাংলায় তুলোট কাগজে লিখিত।
¤ পুঁথিটি আদ্যন্ত খন্ডিত,ভিতরের কয়েকটি পৃষ্ঠা হারিয়ে গেছে বা নষ্ট হয়ে গেছে।
¤ রচনাকারের ভণিতা ছাড়া তাঁর সম্বন্ধে অন্যকোনো পরিচয় পুঁথিতে নেই।
¤ পুঁথির আখ্যাপত্র ও পুষ্পিকা নষ্ট হয়ে গিয়েছে।তাই গ্রন্থের নাম রচনাকাল পুঁথি নকলের সাল তারিখ কিছুই জানা যায়নি।
¤ আলোচ্য পুঁথিটি বনবিষ্ণুপুরের রাজগ্রন্থাগারে রক্ষিত ছিল।
¤পুঁথির মধ্যে যে চিরকূটটি পাওয়া যায় তাতে বোঝা যায় পুঁথিটি ১৬৮২ খ্রি: বনবিষ্ণুপুরের রাজগ্রন্থাগারে ছিল।
● নামকরণ:-
¤ শ্রীকৃষ্ণকীর্তন নামটি আবিষ্কারক বসন্তরঞ্জন রায় মহাশয়ের দেওয়া। তাঁর দেওয়া এই নামের বিরুদ্ধে যে আপত্তি উঠেছে তার প্রধান কারণ;
¤ পুঁথিতে প্রাপ্ত রসিদে শ্রীকৃষ্ণসন্দর্ভ নাম।
¤ শ্রীকৃষ্ণকীর্তন এর কীর্তন শব্দটি কাব্য স্বরূপের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ।
¤ মহম্মদ শহীদুল্লাহ রসিদে উল্লিখিত " শ্রীকৃষ্ণ সন্দর্ব্ব" কেই কাব্যের নামকরণের পক্ষপাতি।
¤ অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় " শ্রীকৃষ্ণসন্দর্ব্ব" কেই কাব্যের নাম হিসেবে গ্রহণ করার পক্ষপাতি।
¤ বিমানবিহারী মজুমদার এর মতে বড়ু চন্ডিদাসের কাব্যের নাম শ্রীকৃষ্ণকীর্তন রাখা যেন কানা ছেলের নাম " পদ্মলোচন" ।তাঁর মতে এই গ্রন্থের নামকরণ করা উচিত " "রাধা কৃষ্ণের ধামালী"।কেননা ঐ পুঁথিতে রাধাকৃষ্ণ পরস্পরের প্রতি ধামালী বলিতেছে। এইরূপ উক্তি দ্বাদশবার পাওয়া গেছে।
¤ সম্পাদক মহাশয় কিংবদন্তি এবং ঐতিহ্য অনুসারে শ্রদ্ধা বশতই এই কাব্যের নাম দেন শ্রীকৃষ্ণকীর্তন, যা বর্তমানে সুপ্রচলিত।
● কাব্য পরিচয়:-
¤ রাধা কৃষ্ণের প্রেমলীলা শ্রীকৃষ্ণকীর্তন এর প্রধান উপজীব্য।
¤ শ্রীকৃষ্ণের ঐশ্বর্য রূপের প্রকাশ ঘটেছে এই কাব্যে।
¤প্রাপ্ত পুঁথিতে জন্মখন্ড ও রাধাবিরহ অংশ খন্ডিত।
¤কাব্যে সংস্কৃত শ্লোকের সংখ্যা ১৬১ ।
¤বড়ুচন্ডীদাসের ভণিতা ২৯৮বার রয়েছে।
¤শৃঙ্গার রসের প্রাধান্য ।
¤মোট তেরোটি খন্ডে বিভক্ত :- জন্মখন্ড,তাম্বুলখন্ড,দানখন্ড,ন
ৌকাখন্ড,ভারখন্ড,ছত্রখন্ড,বৃন্দ
াবনখন্ড,কালীয়দমনখন্ড,যমুনাখন্ড
,হারখন্ড,বানখন্ড,বংশীখন্ড, ও রাধাবিরহ।
¤দীর্ঘতম খন্ড দানখন্ড ,পদসংখ্যা ১১৩।
¤ ক্ষুদ্রতমখন্ড হার ,পদসংখ্যা ৫।
¤ মূলত পয়ার ও ত্রিপদী ছন্দে রচিত।
¤মধ্যযুগের প্রথম একক কবির রচনা শ্রীকৃষ্ণকীর্তন।
¤পুঁথিটি বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদে রক্ষিত আছে।
☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆
● তথ্যসূত্র:-
অমিত্রসূদন ভট্টাচার্য:- শ্রীকৃষ্ণকীর্তন।
সাহিত্যের ইতিহাস:- অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়।
ধন্যবাদ
সুশান্ত সরকার
Success বাংলা পরিবার"