নবনাট্য-গণনাট্য:-




নবনাট্য-গণনাট্য :
খটোমটো বিষয় । তবু বলার চেষ্টা করি ...
নবনাট্য .. মানে নতুন নাটক অর্থাৎ পুরানো নাটক নয় । তার মানে নাটকে নতুন কিছু এলো ; যা আগে ছিলো না । কী সেই নতুনত্ব ? সেটাই খুঁজতে হবে আমাদের ।
গণনাট্য .. বা People's Theater শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন সম্ভবত রোমাঁ রোলাঁ । গণনাট্যকে বলা যায় .. By the people, Of the people, for the people..তাহলে গণনাট্যের আগের নাটক কী জনগণের নাটক ছিলো না ?
দেখা যাক ....
গত শতকের চল্লিশের দশকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয় । ফলে ভারতেও শুরু হয় এক অর্থনৈতিক মন্দা , রাজনৈতিক অস্থিরতা । ৪২-এর ভারত ছাড়ো আন্দোলন , ৪৩-এর মন্বন্তরে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়লো । কিন্তু এ যন্ত্রনা পেশাদারী রঙ্গমঞ্চকে বিশেষ বিচলিত করতে পারলো না । সেই টি পু সুলতান , সিরাজদৌল্লা , বঙ্গে বর্গী বা বড়জোর কর্ণার্জুন । অর্থাৎ থোড় বড়ি খাড়া , খাড়া বড়ি থোড় । এর সঙ্গে সাধারণ মানুষের বিশেষ যোগ ছিলো না ।
** বিশ্বের রাজনৈতিক পরিস্থিতি :: গণনাট্যের ভাবনা :-
*********
১৯২৯ শে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার সুযোগে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ফ্যাসিস্ত শক্তির উত্থান শুরু হয় । মুসোলিনি , হিটলার , তোজো ..এরা । এরা গণতন্ত্রের গলা টিপে স্বৈরতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা চাইলো । আর গণতান্ত্রিক মনোভাবাপন্ন মানুষ এর বিরুদ্ধে এক হতে চাইলো । ১৯৩৫ সালে রোমাঁ রোলাঁর নেতৃত্বে " World Congress Against Fascism and War " গঠিত হল । এ দেশও বসে রইলোনা । মুনশি প্রেমচন্দের নেতৃত্বে লক্ষ্নৌতে প্রথম সর্ব ভারতীয় প্রগতি লেখক সংঘের প্রথম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হল ১৯৩৬-এর ১০-ই এপ্রিল । এরপর অনেক কথা রয়েছে । বংলার কথা বরং বলা যাক । বাংলায় গণনাট্য সংঘ আত্মপ্রকাশ করে ১৯৪২ সালে । ১৯৪৩ সালের ২৫শে মে ভারতীয় গণনাট্য সংঘ [ Indian People's Theater Association = IPTA ] গঠিত হয় ।
••• কেন নবনাট্য:-
যুগসংকটের পটভূমিতে নতুন ধরণের নাটক , নাট্যাভিনয় এবং দর্শকরুচি তৈরি করতে নতুন নাট্যান্দোলন অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়লো । এই আন্দোলনের উদ্দেশ্য , নাটককে বিত্তবানদের কবল থেকে উদ্ধার করে সর্বসাধারণের করে তোলা । সাধারণকে সমাজসচেতন করে বিপ্লবে অনুপ্রাণিত করা ।
** নাটকে যে যে পরিবর্তণ এলো ..
১) নাটকে সমাজসতেনতা , দুর্দশা যন্ত্রণার ছবি উঠে এলো । বড়কথা , তার থেকে উত্তোরণের প্রয়াস দেখা গেলো ।
২) পোশাক পরিচ্ছদ এবং মেক আপের গুরুত্ব হ্রাস পেলো ।
৩) অভিনয়ের রীতি কৌশল বদলালো । অতিনাটকীয়তা , সংলাপ উচ্চারণে দমক চমক বর্জিত হল ।
৪) একক নায়কের পরিবর্তে গোষ্ঠী ঐক্যের প্রকাশ গণসঙ্গীতের ব্যবহারে নাটক অন্য মাত্রা পেলো ।
••• গণনাট্যের আদিম দেবতারা :-
*************************
দিগিন্দ্রচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় , বিনয় ঘোষ , মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য , বিজন ভট্টাচার্য , গঙ্গাপদ বসু , তুলসী লাহিড়ী এবং আরও অনেকে ।
**গণনাট্যের প্রযোজনা :: প্রাক্-নবান্ন ... পরবর্তী-নবান্ন :-
•••••••••••
বিনয় ঘোষের 'ল্যাবরেটরি' , তুলসী লাহিড়ীর 'দু:খীর ইমান' মায়ের দাবী" প্রযোজিত হল । প্রাক্ নবান্ন পর্বে বিজন ভট্টাচার্যের দুটি নাটক ... আগুণ , জবানবন্দী (১৯৪৩ ..অরণি.. এপ্রিল এবং অক্টোবর ) । নাটক দুটিতে রাজনৈতিক ধ্যান ধারণার অল্প বিস্তর প্রকাশ থাকলেও বিপ্লবের উচ্চকণ্ঠ বা বাঁচার স্বপ্নকে ইতিবাচক পরিনতি দেওয়ার প্রয়াস প্রাধান্য পেলো না । নবান্ন'র মূল সমস্যাও খাদ্যসংকট । তবে শোষণ ও প্রতিরোধের চিত্র নবান্নে বলিষ্ঠভাবে পাওয়া গেলো । তাই বলা যায় , 'নবান্ন' গণনাট্যের প্রথম সফল প্রযোজনা ।
রয়ে গেল গ্রুপ থিয়েটার , শম্ভু মিত্র , উৎপল দত্ত , তৃপ্তি মিত্র । রয়ে গেল আমাদের শাওলি মিত্র , বাদশা , কৌশিকরা । এঁদের বিস্তৃত আলোচনার অবকাশ রেখে ; শেষ করি ।
ধন্যবাদ সবাইকে ।
ধন্যবাদ সাকসেস বাংলা ।

আলোচক  - কমলাকান্ত স্যার 

Share this