"চন্দ্রকুমার দে"



"চন্দ্রকুমার দে"

     ☆ বাংলা লোকসাহিত্যের একনিষ্ঠ সেবক ও সংগ্রাহক চন্দ্রকুমার দে।তাঁর সাহিত্যের প্রতি ভালোবাসা এবং নিজস্ব প্রতিভা সত্বেও সাহিত্যাঙ্গনে স্থায়ী আসন লাভ করতে পারেননি।
     ☆ জন্ম:-চন্দ্রকুমার দে ময়মনসিংহের নেত্রকোনা মহকুমার কেন্দুয়া থানার অধীন আইথর গ্রামে 1881 খ্রী: জন্মগ্রহণ করেন।পিতা রামকুমার দে,মাতা তারাসুন্দরী মতান্তরে কুসুমকামিনী দে।
     ☆ শিক্ষা:-গ্রামের টোল তাঁর শিক্ষা জীবনের সূচনা হয়।পরে ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় বাংলা ভাষা সাহিত্যে দক্ষতা লাভ করেন।
     ☆ বিবাহ:-তিনি 1902 সালে হীরনবালা নামের এক তরনীকে বিয়ে করেন।তাঁদের কোনো সন্তান ছিল না।
     ☆ কর্মজীবন:- গ্রামের মুদিখানায় মাসিক একটাকা বেতনের চাকরি দিয়ে কর্মজীবনের সূচনা।পরবর্তীতে স্থানীয় জোতদারের অধীনে(তারানাথ তালুকদার)গোমস্তার চাকরি পান।সেই সূত্রে গ্রামে গ্রামে ঘুরতে ঘুরতে ঐ অঞ্চলের সাধারণ মানুষের মৌখিক ধারার গান,গীতিকা,বারোমাসী,পুরাণ,পাঁচালী ইত্যাদির সন্ধান পান।তিনি সেসব সংগ্রহ করে ময়মনসিংহ থেকে' সৌরভ' পত্রিকায় প্রকাশ করেন।পরে কলকাতার' প্রবাসী' পত্রিকাতেও প্রকাশ করেন।যা পরবর্তীতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য দীনেশচন্দ্র সেনের দৃষ্টিতে পড়ে।এবং তিনি সৌরভ পত্রিকার সম্পাদক কেদারনাথ মজুমদার কে তাঁর সাথে যোগাযোগ করতে বলেন।চন্দ্রকুমার চিকিৎসার জন্য কলকাতা এলে ডঃ সেন তাঁর চিকিৎসা ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দেন। এরপর ডঃ সেন তাঁকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাসিক 50 টাকা বেতনের নিয়মিত সংগ্রাহক নিযুক্ত করেন।চন্দ্রকুমার প্রায় দুবছরের ব্যবধানে(1921-1923) 22 টি পালা সংগ্রহ করেন।দীনেশচন্দ্র সেন কতৃক সম্পাদিত এবং কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কতৃক প্রকাশিত" পূর্ব মৈমনসিংহ গীতিকা"ও পূর্ববঙ্গ গীতিকা(চতুর্থ খন্ড) এ সেগুলি স্থান পায়।তিনি ময়মনসিংহ ও সিলেট থেকে সেগুলি সংগ্রহ করেন।তাঁর সংগৃহীত মহুয়া, মালুয়া,কমলা,ভেলুয়া,সুন্দরী, দেওয়ানা মদিনা,কাজলরেখা, কঙ্ক ও লীলা ,দস্যু কেনারাম,ঈসা খাঁ দেওয়ান,ফিরোজ খাঁ দেওয়ান প্রভৃতি পালাগান বিষয় ও সাহিত্য গুনে উৎকৃষ্ট।এগুলির ইংরেজি অনুবাদ পড়ে রোঁমা রোঁলা,লর্ড রোনাল্ডশে,গ্রিয়ারসর্ন,সিলভেল প্রমুখ বাংলাভাষা সাহিত্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হন।এসবকিছুর মূলে রয়েছে চন্দ্রকুমার দের শ্রম,নিষ্ঠা,ধৈর্য্য ও অনুরাগ।
☆ সম্বর্ধনা:- 1938 সালে 5 ই সেপ্টেম্বর কলকাতার সুধীসমাজ তাঁকে " নাগরিক সম্বর্ধনা" দেয়।ডাঃ নীলরতন সরকার ছিলেন এর সভাপতি।মানপত্রে তাঁকে " ময়মনসিংহ গাথা সাহিত্যের পূজক দেশমাতৃকার অক্লান্ত সেবক" বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
     ☆ রচনা:- তিনি " সাহিত্যের জমা খরচ" ও" স্ত্রীর পত্র" নামে দুটি গন্থ রচনা করেন।
    ☆ পত্রিকা প্রকাশ:- তিনি " মহাভারত " নামে একটি মাসিক পত্রিকা নিজ গ্রাম থেকে প্রকাশ করেন।এতে তাঁর "লুথার মানিক" নামে মহুয়া পালার নাট্যরূপ ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হয়।
    ☆ 1946 সালের ডিসেম্বর মাসে বাংলা লোক সাহিত্যের এই জ্যোতিষ্ক পরলোক গমন  করেন।
         

        ধন্যবাদ
Success বাংলা
♧তথ্য সূত্র:লোকসংস্কৃতির বিশ্বকোষ, মৈমনসিংহ গীতিকা: দীনেশচন্দ্র সেন রায় বাহাদুর ভূমিকা । সাহিত্যের ইতিহাস :- অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়।
ধন্যবাদ,
সুশান্ত সরকার।

Share this