সাহিত্যের রূপ ও রীতি


সাহিত্যের রূপ ও রীতি

* সাহিত্যের রূপ ও রীতি আলোচনা প্রসঙ্গে প্রথমেই আমাদের জানা দরকার, সাহিত্য কী? এবং তার রূপ ও রীতি বলতেই বা আমরা কী বুঝি। ইংরেজ কবি ম্যাথ্যু আর্নল্ড বলেন, সাহিত্যের উদ্দেশ্য মনুষ্যত্ব বিকাশ করা। জ্ঞানস্পৃহা সৌন্দর্যস্পৃহা প্রভৃতি মানুষের যতগুলি উচ্চ প্রবৃত্তি আছে তার প্রত্যেকটার পরিপূর্ণ পরিণতির সহায়তা করা। তাহলে আমরা বলতে পারি, মানুষের জাগতিক বা মহাজাগতিক চিন্তা চেতনা, অনুভূতি, সৌন্দর্য্য ও শিল্পের লিখিত বা লেখকের বাস্তব জীবনের অনুভূতিই হল সাহিত্য।
অর্থাৎ যদি উদাহরণ দিয়ে একটু বোঝনো যায় গাইড-বই এবং ভ্রমণবৃত্তান্তের মধ্য গাইড-বই কে সাহিত্য বলা যায় না।
কিন্তু ভ্রমণব্রত্তান্তকে অবশ্যই সাহিত্যে বলতে পারি। এর মূল পার্থক্য হল গাইড-বইয়ে কেবলমাত্র তথ্যসংগ্রহ থাকে, ভ্রমণবৃত্তান্তে ভ্রমণকারী লেখকের ব্যক্তিগত প্রভাব বিদ্যমান,। সেখানে লেখকের চিন্তা, চেতনা, অনুভূতি, সৌন্দর্য্য ও শিল্পের বিকাশ লক্ষ্য করা যায়।এবং রয়েছে হৃদয়ের ভাব। তাহলে গাইড-বই এবং ভ্রমণবৃত্তান্তের বিষয় এক, কেবল রচনাপ্রণালীর প্রভেদ মাত্র, তাই ভ্রমণবৃতান্ত সাহিত্য হয়ে উঠেছে।তাই বলতে পারি সাহিত্য হল তাই যার মধ্য দিয়ে মানুষের অনুভূতি, সৌন্দর্য্য ও শিল্পের  বা বাস্তব জীবনের অনুভূতি লক্ষ্য করা যায়।  মোট কথাটা এই, সাহিত্যের বিষয় সুন্দর, নৈতিক এবং যুক্তিসংগত।
* আমরা সামগ্রিকভাবে ‘সাহিত্য’ বলি বটে কিন্তু বিচারের সময়ে গদ্য, পদ্য কিংবা গল্প উপন্যাস কবিতা নাটক ইত্যাদি স্বতন্ত্রভাবে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে হৃদয়ঙ্গম করি। সার্বিকভাবে সাহিত্যের রূপ বলতে আমরা সাহিত্যের বিভিন্ন শাখা বুঝে থাকি। যেমন: কবিতা, মহাকাব্য, নাটক, কাব্যনাট্য, ছোটগল্প, উপন্যাস, রম্যরচনা, প্রবন্ধ ইত্যাদি। আর ‘রীতি’ হলো ঐ শাখাগুলো কিভাবে নির্মিত হয়েছে সে বিষয়ে পর্যবেক্ষণ ও আলোচনা। যেমন ছন্দোবদ্ধ ভাষায় অর্থাৎ পদ্যে যা লিখিত হয় তাকেই আমরা ‘কবিতা’ বলে থাকি। আবার প্লট বা আখ্যানভাগ,  গল্প ও তার ভিতরে উপস্থিত বিভিন্ন চরিত্রের সমন্বয়ে  বিস্তারিতভাবে  বর্ণনাত্মক যে  কাহিনি গড়ে ওঠে তা হল উপন্যাস।
ছোটগল্পেও থাকে উপন্যাসের মতোই কোনো না কোনো কাহিনির বর্ণনা তবে তা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নয়। কাহিনির ভিতর থেকেই বেছে নেওয়া কোনো অংশ থাকে মাত্র। ইংরেজি সাহিত্যের উদাহরণ অনুসরণ করে বাংলায় যেমন উপন্যাস লিখিত হয়েছে। ছোটগল্পেরও অনুপ্রেরণা এসেছে পাশ্চাত্য সাহিত্য থেকেই।
আবার, পাত্রপাত্রী বা চরিত্রগুলোর সংলাপ অথবা পারস্পরিক ক্রিয়াপ্রতিক্রিয়ার ভেতর দিয়ে একটি কাহিনি গড়ে ওঠেলে তাকে আমরা নাটক বলতে পারি। গদ্যে লিখিত এমন রচনা যার  উদ্দেশ্য পাঠকের জ্ঞানতৃষ্ণাকে পরিতৃপ্ত করা। কোনো সন্দেহ নেই-এজাতীয় লেখায় তথ্যের প্রাধান্য থাকবে যার ফলে অজ্ঞাত তথ্যাদি পাঠক জানতে পারবে। সাহিত্যের এই রীতিকে প্রবন্ধ বলা যায়।
* সুতরাং সাহিত্যকে আমরা গদ্য, পদ্য ও নাটক এই তিনভাগে বিভক্ত করতে পারি। গদ্যের মধ্যে প্রবন্ধ, নিবন্ধ, ছোটগল্প, উপন্যাস ইত্যাদি এবং পদ্যের মধ্যে ছড়া, কবিতা কাব্যগ্রন্থ ইত্যাদিকে অন্তর্ভুক্ত করা যায়। আর নাটক ও নাটিকা।

আলোচক: সুশান্ত কর্মকার।
অ্যাডমিন, সাকসেস বাংলা
গ্রন্থপঞ্জি
রবীন্দ্ররচনাবলী:
সাহিত্যের রূপ ও রীতি

Share this