মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে মঙ্গলকাব্য

♦মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে মঙ্গলকাব্য♦

মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের ধারায় অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংযোজন মঙ্গল কাব্যগুলি। তুর্কি আক্রমণ এবং তার ফলস্বরূপ পৌরাণিক ও লৌকিক সংস্কৃতির সমন্বয় মঙ্গলকাব্য উদ্ভবের সামাজিক প্রেক্ষিত রচনা করে। মঙ্গল কাব্যের 'মঙ্গল' কথাটি ঋগ্বেদে(10/85)পাওয়া যায়, যার অর্থ কল্যাণ। মঙ্গলকাব্যের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, "বিভিন্ন দেবদেবীর পূজা প্রচার সম্বন্ধীয় একপ্রকার আখ্যানকাব্যকে মঙ্গলকাব্য বলে।" মোটামুটিভাবে দেবেশ কুমার আচার্যকে অনুসরণ করে বলতে পারি - খ্রিস্টিয় পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষ ভাগ থেকে অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ ভাগ পর্যন্ত পৌরাণিক ও লৌকিক কাহিনীর সংমিশ্রনে মূলত দেবদেবীর পূজা প্রচার ও ভক্তকাহিনি অবলম্বনে যে ধরনের আখ্যানমূলক কাব্য রচিত হয়েছে তাকে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে মঙ্গলকাব্য বলা হয়। মঙ্গলকাব্য এক মঙ্গলবার থেকে অন্য মঙ্গলবার পর্যন্ত গাওয়া হতো বলে মঙ্গলকাব্যের অন্য নাম অষ্টমঙ্গলা (ড. সুকুমার সেনের মতে মনসামঙ্গল, চন্ডীমঙ্গল আট দিন এবং ধর্মমঙ্গল বারো দিন গাওয়া হতো)। গঠনশৈলির দিক দিয়ে মঙ্গলকাব্যগুলিকে চারটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা - 1)বন্দনাখন্ড, 2)গ্রন্থোৎপত্তির কারণ ও আত্মবিবরণী, 3)দেবখন্ড ও 4)নরখন্ড। মঙ্গলকাব্য মূলত মিশ্রকলাবৃত্ত রীতির পয়ার ছন্দে রচিত ।এই ছন্দকে মধ্যযুগে পাঁচালি ছন্দও বলা হতো। এছাড়া ত্রিপদী, একাবলী ছন্দের ব্যবহারও মঙ্গলকাব্যে দেখা যায়। এই কাব্যগুলি লাচাড়ি ছন্দে গাওয়া হতো।

## মঙ্গলকাব্যের বৈশিষ্ট্য :
1)মঙ্গলকাব্য গণেশাদি অন্যান্য দেবতার বন্দনার মধ্য দিয়ে সূচনা হয়।
2)মঙ্গলকাব্যগুলি রচনার পিছনে স্বপ্নাদেশ বা দৈবাদেশের কথা উল্লেখ আছে প্রত্যেক মঙ্গলকাব্যের "গ্রন্থোৎপত্তির কারণ" অংশে

3)মঙ্গলকাব্যের নায়ক - নায়িকাদের অনেকেই বণিক বা অন্ত্যজ শ্রেণিভুক্ত।
4)মঙ্গলকাব্যগুলি মূলত দেব- মাহাত্ম্য বর্ণনার উদ্দেশ্যে রচিত হওয়ার মাঝে মাঝে অলৌকিক বা অতিপ্রাকৃত ঘটনা-সমাবেশ লক্ষ্য করা যায়।
5)প্রত্যেক মঙ্গলকাব্যের কাহিনি দেবখন্ড ও নরখন্ড নামে দুটি পৃথক অংশে বিভক্ত।
6)মঙ্গলকাব্যের দেব-দেবীদের বিভিন্ন প্রয়োজনে ছদ্মবেশ ধারণ এবং ছলনা করতে দেখা যায়।
7)প্রবাদ, প্রহেলিকা, প্রবচন ইত্যাদির উল্লেখে সমকালীন সমাজ জীবনের পরিচয় পাওয়া যায়।
8)মঙ্গলকাব্যের বর্ণনা কবিগণ মূলত পাঁচালির ঢঙে করেছেন - যা লোকসমাজে ছড়া ও ব্রতকথার আকারে প্রচলিত ছিল।

           মঙ্গলকাব্যগুলিকে মূলত চারটি ভাগে ভাগ করা হয়। যথা - 1)মনসামঙ্গল কাব্য 2)চন্ডীমঙ্গল কাব্য 3)ধর্মমঙ্গল কাব্য  4)অন্নদামঙ্গল কাব্য ।

♦তথ্যসূত্র :বাঙ্গালা সাহিত্যের ইতিহাস - সুকুমার সেন।
বাংলা সাহিত্যের সম্পূর্ণ ইতিবৃত্ত - অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় ।
বাংলা সাহিত্য পরিচয় - পার্থ চট্টোপাধ্যায় ।
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস - দেবেশকুমার আচার্য ।
        এবং
ইন্টারনেট।।

♦অালোচক-- তাপস ঘোষ♦
[ছাত্র-- বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়]
♦অ্যাডমিন-- success বাংলা গ্রুপ♦

Share this