প্রেমেন্দ্র মিত্র জীবন ও সাহিত্য


প্রেমেন্দ্র মিত্র জীবন ও সাহিত্য
     অাধুনিক বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে একজন অন্যতম সাহিত্যিক হলেন প্রেমেন্দ্র মিত্র। ১৯০৪ খ্রি: বর্তমান বাংলাদেশে তাঁর জন্ম হয়। অসামান্য প্রতিভার অধিকারী প্রেমেন্দ্র মিত্রের কাব্য সাহিত্যের পাশাপাশি  কথাসাহিত্যেও ছিল অবাধ যাতায়াত। বাংলা সাহিত্যে তাঁর অাবির্ভাব  'প্রবাসী ' পত্রিকাকে কেন্দ্র করে হলেও তিনি ছিলেন মূলত কল্লোল গোষ্ঠীর লেখক, কল্লোলের ত্রয়ী -দের মধ্যে অন্যতম একজন।
     *প্রেমেন্দ্র মিত্রের সাহিত্যজীবন শুরু হয় প্রবাসী পত্রিকায় প্রকাশিত 'শুধু কেরাণী '-গল্পের মাধ্যমে। তবে এই গল্প লেখার  পিছনেও রয়েছে এক গল্প। শোনা যায় ঢাকাতে জগন্নাথ কলেজে ইন্টারমিডিয়েট সায়েন্স নিয়ে পড়ার সময় তিনি একদিন কলকাতায় এসে থাকার জন্য ২৮নং গোবিন্দ ঘোষাল লেনের মেস বাড়িতে ওঠেন। ঐ মেসের বোর্ডারেরা সে সময় ছুটিতে বাড়ি চলে যাওয়ায় দিন চারেক মেস একেবারে খালি হয়ে যায়।ফলে মফঃসলের কোন এক সদ্যবিবাহিত বোর্ডারের চিঠি তিনি হাতে পান এবং সেটি পড়ে ফেলেন। তিনি তাঁর স্মৃতি কথা 'নানারঙে বোনা' -তে জানিয়েছেন, যে চিঠিটি এক নব বিবাহিতা গ্রাম্য বধুর স্বামীর কাছে লেখা। চিঠির বিষয়বস্তু নববিবাহিত কেরাণীদম্পতির ব্যাথাভরা দীর্ঘশ্বাসেতে স্ত্রী জানিয়েছে "আর জ্বর হয় না"। এই চিঠিটি পড়ার পর ওই রাত্রেই প্রেমেন্দ্র মিত্র লিখে ফেলেন দুটি গল্প-- 'শুধু কেরাণী',এবং 'গোপনচারিণী'। পরের দিনই 'প্রবাসী'- পত্রিকার নামে গল্পদুটি নিজেই ডাকবাক্সে দিয়ে আসেন। এরপর তিনি ঢাকা ফিরে যান এবং পরে জানতে পারেন প্রবাসীর চৈত্র,১৩৩০ সংখ্যায় লেখাটি বেরিয়েছে। পরপর প্রবাসীর দুটি সংখ্যায় প্রকাশীত এই গল্পদুটিই প্রেমেন্দ্র মিত্রকে রাতারাতি বিখ্যাত করে তুলে।
♦সৃষ্টিকর্মঃ
♣ কাব্যগ্রন্থ:---
     'প্রথমা'(১৯৩২),'সম্রাট'(১৯৪০),ফেরারী ফৌজ'(১৯৪৮),সাগর থেকে ফেরা(১৯৫৬),কখনও মেঘ(১৯৬০),হরিণ চিতা চিল(১৯৬১),অথবা কিন্নর(১৯৬৫),সঙ্গীর নিকটে(১৯৭২)প্রভৃতি।।
♣গল্পগ্রন্থ:-
     বেনামী বন্দর (১৯৩০),পুতুল ও প্রতিমা (১৯৩১), অফুরন্ত (১৯৩২), পঞ্চশর (১৯৩৪), মৃত্তিকা(১৯৩৫), মহানগর (১৯৩৭), ধূলিধুসর (১৯৩৮), কুড়িয়ে ছড়িয়ে (১৯৪০), সামনে চড়াই(১৯৫০), সপ্তপদী (১৯৫৩),  জলপায়রা (১৯৫৭), প্রেমই ধন্বন্তরী (১৯৫৮), নানা রঙে বোনা (১৯৬০)।
♣ উপন্যাস:-
     পাঁক (১৯২৬), মিছিল (১৯২৮), আগামীকাল (১৯৩০), কুয়াশা (১৯৩১), উপনায়ন (১৯৩৩), ছায়াতোরণ (১৯৪১), আহূতি (১৯৪১), নতুন খবর (১৯৪৮), মৌসুমী (১৯৫৮), ডাকিনীর চর (১৯৫৮), নিশুতিপুর(১৯৫৮), প্রতিধ্বনি ফেরে(১৯৬২), দূর বসন্ত (১৯৬২), মনুদ্বাদশ(১৯৬৪), এলো অচেনা (১৯৬৫),বহ্নি বাসর (১৯৬৫), অমলতাস(১৯৬৬), জড়ানো মালা (১৯৬৬), হৃদি দিয়ে গড়া(১৯৬৭), দিগ বলয়(১৯৬৭), সূর্য কাঁদলে সোনা (১৯৬৯),জেগে থাকে প্রেম(১৯৬৯), যিনি বিধাতা(১৯৭০), সেই যে শহর রাজোলি (১৯৭২), দ্বিতীয় জীবন (১৯৭২)।
♦ তিনি "কালিকলম" পত্রিকা  সম্পাদনা করেছেন।
     ♦১৯৫৭খ্রি: তিনি,'সাহিত্য আকাদেমি' এবং ১৯৫৯ খ্রি: রবীন্দ্র পুরস্কারে ভূষিত হন।।।
রবীন্দ্র পরবর্তী কবি ও ছোটগল্পকারদের মধ্যে অন্যতম একজন ছিলেন প্রেমেন্দ্র মিত্র। তাঁর রচনা গুলিতে মধ্যবিত্ত জীবনের ব্যাথা-বেদনার পরিচয় স্পষ্ট হয়ে দেখা দিয়েছে।কখনও কখনও তাঁর কবিসত্ত্বা গল্পকারকে অতিক্রম করে গেছে আবার কখনও কখনও গল্পকার অতিক্রম করেছেন কবিকে।এযেন সমগ্র বাঙালি পাঠকের কাছে একটা বিরাট পাওনা।১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দে এই মহান সাহিত্যিকের মহাপ্রয়াণ  ঘটে।

গ্রন্থঋণ/তথ্যসূত্র --
♦গল্পের ভূবন প্রেমেন্দ্র মিত্র -- ড. রামরঞ্জন রায়।
♦প্রসঙ্গ : প্রেমেন্দ্র মিত্র--ড. রামরঞ্জন রায়।
♦বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস-- দেবেশ কুমার আচার্য।

 আলোচক -- রিক্ সরকার
(অ্যাডমিন, সাকসেস বাংলা)

Share this