বাংলা ভাষার উদ্ভব



        প্রাচীন বঙ্গদেশের অধিবাসীদের সম্পর্কে আর্যদের প্রবল অবজ্ঞা ও দারুণ ঘৃণার কথা জানা যায় ঐতরেয় ব্রাহ্মণ ,মহাভারত,ভাগবত প্রভৃতি গ্রন্থ থেকে। এদেশের মানুষের ভাষাকে আর্যগণ "বয়াংসি"অর্থাৎ পাখিদের কিচিরমিচির ডাক বলে উপহাস করত। আর্যরা এদেশে এলে ব্রাত্য হয়ে যেতেন-সামাজিক মর্যাদা পুনরুদ্ধার করতে তাঁদের প্রায়শ্চিত্ত করতে বাধ্য হত। প্রাচীন বঙ্গদেশে অস্ট্রিক‌ও দ্রাবিড় ভাষা প্রচলিত ছিল বলে ভাষাচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এদেশ আর্যদের অধিকারভুক্ত হ‌ওয়ার পর এদেশের ধর্মকর্ম, জীবনাচারণ, এমনকি ভাষার ক্ষেত্রেও এক গভীর পরিবর্তন সাধিত হয়।আর্যদের বঙ্গদেশে আগমনের পূর্বে খ্রিস্টপূর্ব সপ্তম শতাব্দীতে পাণিনি আর্যদের বৈদিক ভাষার সংস্কারসাধন করেন। এই সংস্কারপ্রাপ্ত‌ই ভাষাই হল সংস্কৃত ভাষা। এই সংস্কৃত ভাষার সঙ্গে পূর্বভারতীয় প্রাচীন ভাষাগুলি মৌলিক সংস্পর্শে সৃষ্টি হল মাগধী প্রাকৃত ভাষার। মুখের ভাষা বার বার পরিবর্তিত হয়, মাগধী প্রাকৃত থেকে জন্ম হল মাগধী অপ্রভংশের। বাংলাদেশে সংস্কৃত ভাষার চর্চার কোনো  ধারাবাহিক ইতিহাস নেই, প্রাকৃত ভাষাতেও খুব বেশি গ্রন্থ রচিত হয়নি। কিন্তু পাল রাজবংশের আমলে এদেশে অপভ্রংশের খুব চর্চা হয়েছিল। এই অপভ্রংশের পরবর্তী পরিবর্তিত স্তর‌ই বাংলা। তাই সংস্কৃত ভাষা বাংলার জননী নয়-প্রপিতামহী বা প্রমাতামহী স্থানীয়া। এদেশে অপভ্রংশ ভাষায় রচিত উ‍ৎকৃষ্ট সাহিত্যিক নিদর্শনগুলি হল-কবিবর হালের "গাথাসপ্তশতী", পিঙ্গলাচার্যের "প্রাকৃতপৈঙ্গল" কৃষ্ণাচার্যের "দোহাকোষ" প্রভৃতি। মাগধী অপভ্রংশ থেকে আর‌ও কতকগুলি আধুনিক ভারতীয় ভাষার জন্ম হয়েছে। যেমন-অসমিয়া, মৈথিলি, ওড়িয়া প্রভৃতি।

আলোচক – সুমিতা সরকার
এডমিন, সাকসেস বাংলা।

Share this