বাংলা সাহিত্যে বিদ্যাপতি কে অন্তর্ভুক্তির কারন।


       বাংলা বৈষ্ণব কবিতার আলোচনায় মিথিলার বিদ্যাপতির স্থান সমুচ্ছ ও সুচিহ্নিত ।কিন্তু বিদ্যাপতি বাঙালী নন। বাংলা ভাষায় তেমন লেখেননি ।কিন্তু কোন যুক্তিতে আমাদের আলোচ্য হয়ে উঠল? সত্যিই কোন ভাষায় তিনি লিখেছেন? আগের পিছনের বাংলা কবিতার সঙ্গে তাঁর যোগ কতটা? এমনি নানা ঐতিহাসিক বিতর্ক ।
জয়দেবের সাথে এবিষয়ে বিদ্যাপতির তুলনা চলেনা । জয়দেব বাঙালী কবি ।জল মাটি হাওয়া, বাংলার ভাবরসের একটা স্পষ্ট চিহ্ন তাঁর সংস্কৃতে লেখা কাব্যের সারা দেহে মুদ্রিত । বিদ্যাপতি বাঙালী না হয়েও, এমনকি বাংলা ভাষায় কাব্য কবিতা না লিখেও বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে তাঁর স্থান নিয়ে সংশয় ঘুচতে চায়না কিছুতেই ।
       রাজকবি হিসাবে বিপুল খ্যাতির অধিকারী বিদ্যাপতি । মৈথিলী ভাষায় হরগৌরী বিষয়ক পদ, সংস্কৃত ভাষায় স্মৃতিগ্রন্থ, অবহটঠ ভাষায় সমকালীন ইতিহাস আশ্রয়ী কাব্য লিখেছেন ।যদিও তাঁর রাধাকৃষ্ণ বিষয়ক লেখা কবিতা গুলিই বাংলা সাহিত্যের অন্দরমহলে আসন পেতে দিয়েছে ।
       ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগ পর্যন্ত বিদ্যাপতির প্রতি মিথিলাবাসীর উপেক্ষা লক্ষ্যণীয় ।বিদ্যাপতির কবিতা ভাব ও ভাষা দুই কারণেই বাংলা সাহিত্যের সঙ্গে সূত্রবদ্ধ।
রাধাকৃষ্ণ পদের ভাষা কে অনেক গবেষক বিকৃত মৈথিলী বলে মনে করেন ।মৈথিলীর ভিত্তিতে বাংলা, অসমিয়া, ওড়িয়া, হিন্দির মিশ্রনে সিদ্ধ ।তাই বাংলা ভাষার সঙ্গে এর সম্বন্ধ নৈমিত্তিক নয়। মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যের একটা প্রধান বিষয় হল রাধাকৃষ্ণের প্রণয়লীলা ।বিশেষ করে জয়দেবের পদাঙ্ক অনুসরন করেই বিদ্যাপতির কবিতা রচনা । বিদ্যাপতির পদ গুলো বাংলাদেশে জনপ্রিয় ছিল, চৈতন্যেরও আগে থেকেই ।চৈতন্যোত্তর বৈষ্ণব সমাজে বিদ্যাপতি মহাজন রূপে পূজা পেয়েছেন ।বস্তুত বৈষ্ণব পদ সাহিত্যের একটা মূখ্য শিল্পধারাই হল বিদ্যাপতি প্রদর্শিত ।
       মিথিলাবাসী বিদ্যাপতি কে ৪০০ বছর মনে রাখেনি, কিন্তু বাঙালী বিদ্যাপতি কে নিজের করে নিয়েছিল ।আজ নূতন জাতীয়বাদী ভাবনায় মিথিলাবাসী তাকে নতুন করে আবিষ্কার করুক ক্ষতি নেই, কিন্তু মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে বিদ্যাপতির দাবি কিছুতেই নাকচ করা যায় না ।

আলোচক – বিশ্বজিৎ পাল 
সদস্য, সাকসেস বাংলা।

Share this