বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্র পরবর্তীকালে এক প্রতিবাদী সুর শোনা গিয়েছিল মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কণ্ঠে। তিনি ঝঞ্ঝার বেগে আবির্ভূত হয়ে এক গভীর অদ্ভূত অন্তর্দৃষ্টি নিয়ে পচাগলা সমাজ ব্যবস্থাকে নিজস্ব জীবন দর্শনে জারিত করে, নারী পুরুষের প্রচলিত জটিল ও গভীর মনস্তাত্ত্বিক সম্পর্ককে অসামান্য দক্ষতায় উপস্থাপিত করেছেন। তার পিতৃদত্ত নাম প্রবোধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় হলেও তিনি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় নামেই সাহিত্য অঙ্গনে পরিচিত। গায়ের রঙ উজ্জ্বল কালো অথচ ফুটফুটে সুন্দর মুখশ্রী দেখে আঁতুড়ঘরেই নামকরনণ হয়েছিল 'কালো মাণিক'। সেই সূত্রে তার ডাক নাম হয় মানিক।
জন্ম-বাল্য-শিক্ষা:-
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯০৮ সালের ১৯শে মে পূর্বতন বিহারের সাঁওতাল পরগণার দুমকায়। পিতা হরিহর বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন সেটেলমেন্ট বিভাগের কানুনগো। মাতার নাম নীরদাসুন্দরী দেবী। মানিকের বয়স যখন মাত্র ১৬ বছর, তখন তাঁর মা নীরদাসুন্দরী দেবী পরলোক গমন করেন। পিতার সরকারি চাকরির জন্য বাংলা ও বিহারের বহু অঞ্চলে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাল্যকাল কেটেছে, ফলে শিক্ষা জীবনটাও কেটেছে বিভিন্ন জায়গায়। কলকাতার মিত্র ইনস্টিটিউশনে বড়দার তত্বাবধানে স্কুল শুরু করলেও, বড়দা চাকরিসূত্রে বদলি হয়ে গেলে তিনি বাবার কাছে টাঙ্গাইলে গিয়ে ভর্তি হন।সেখান থেকে কাঁথি মডেল স্কুল। শেষে বড়দির কাছে থেকে মেদিনীপুর জিলা স্কুল থেকে, আবশ্যিক ও ঐচ্ছিক গণিতে লেটার নিয়ে, প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাশ করেন। এরপর বাঁকুড়ার ওয়েসলিয়ন কলেজ যার বর্তমান নাম বাঁকুড়া ক্রিশ্চিয়ান কলেজ সেখান থেকে ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম বিভাগে আই.এস.সি. পাশ করে, কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগে অঙ্কে অনার্স নিয়ে ভর্তি হন। কিন্তু এসময় সাহিত্যকর্ম তাঁকে পড়াশোনার চেয়ে বেশি আকর্ষণ করেছিল, সাহিত্যচর্চায় মন দিয়ে
ফেলেছিলেন বলে আর পড়ায় সময় দিতে পারছিলেন না। তাই বার বার কলেজের পরীক্ষায় ফেল করায় তাঁর পড়াশনায় ইতি হয়।
সাহিত্য সূচনা:-
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাহিত্যজগতে আগমন নিতান্ত আকস্মিক। ছাত্রাবস্থায় তিনি কলেজের বন্ধুদের সাথে তর্ক করে তখনকার দিনের সুবিখ্যাত 'বিচিত্রা' পত্রিকায় প্রকাশের জন্য মাণিক বন্দ্যোপাধ্যায় ছদ্মনামের আড়ালে "অতসীমামী" নামে একটি ছোটোগল্প রচনা করে পাঠান। গল্পটি ১৯২৮ সালের পৌষ সংখ্যায় প্রকাশিত হলে সাহিত্য জগতে ব্যপক সাড়া পড়ে যায়। গল্পটি পাঠক ও সমালোচক মহলে ভূয়সী প্রশংসা লাভ করে সাহিত্য সমাজে তিনি সাদরে গৃহীত হন। তার পর থেকে বিজ্ঞান সাধনার পরিবর্তে সাহিত্য সরস্বতীই হয়ে ওঠে তাঁর আরাধ্যা ও মূল পেশা। এরপর থেকে তিনি 'বিচিত্রা' 'বঙ্গশ্রী' 'ভারতবর্ষ' 'আনন্দন্দবাজার' বহু পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।পুরোপুরি লেখক হিসাবে মাণিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবির্ভাব "বঙ্গশ্রী" পত্রিকায়। তাঁর প্রথম উপন্যাস 'দিবারাত্রির কাব্য' এই পত্রিকাতেই বের হয়। তাঁর মাত্র ৪৮ বছরের সংক্ষিপ্ত জীবনে তিনি বহু ছোটোগল্প ও উপন্যাস রচনা করেছেন যে গুলি বাংলা সাহিত্যে এবং পাঠক সামজে তাঁকে অমর করে দিয়ে গেছে।
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাহিত্যজগতে আগমন নিতান্ত আকস্মিক। ছাত্রাবস্থায় তিনি কলেজের বন্ধুদের সাথে তর্ক করে তখনকার দিনের সুবিখ্যাত 'বিচিত্রা' পত্রিকায় প্রকাশের জন্য মাণিক বন্দ্যোপাধ্যায় ছদ্মনামের আড়ালে "অতসীমামী" নামে একটি ছোটোগল্প রচনা করে পাঠান। গল্পটি ১৯২৮ সালের পৌষ সংখ্যায় প্রকাশিত হলে সাহিত্য জগতে ব্যপক সাড়া পড়ে যায়। গল্পটি পাঠক ও সমালোচক মহলে ভূয়সী প্রশংসা লাভ করে সাহিত্য সমাজে তিনি সাদরে গৃহীত হন। তার পর থেকে বিজ্ঞান সাধনার পরিবর্তে সাহিত্য সরস্বতীই হয়ে ওঠে তাঁর আরাধ্যা ও মূল পেশা। এরপর থেকে তিনি 'বিচিত্রা' 'বঙ্গশ্রী' 'ভারতবর্ষ' 'আনন্দন্দবাজার' বহু পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।পুরোপুরি লেখক হিসাবে মাণিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবির্ভাব "বঙ্গশ্রী" পত্রিকায়। তাঁর প্রথম উপন্যাস 'দিবারাত্রির কাব্য' এই পত্রিকাতেই বের হয়। তাঁর মাত্র ৪৮ বছরের সংক্ষিপ্ত জীবনে তিনি বহু ছোটোগল্প ও উপন্যাস রচনা করেছেন যে গুলি বাংলা সাহিত্যে এবং পাঠক সামজে তাঁকে অমর করে দিয়ে গেছে।
রচনাসমূহ:
উপন্যাস:-
জননী (১৯৩৫ ), দিবারাত্রির কাব্য (১৯৩৫), পুতুলনাচের ইতিকথা (১৯৩৬), পদ্মানদীর মাঝি( ১৯৩৬), জীবনের জটিলতা (১৯৩৬), অমৃতস্য পুত্রাঃ (১৯৩৮), দুই পর্বে 'শহরতলি' (১৯৪০, ১৯৪১), ধরাবাঁধা জীবন (১৯৪১), প্রতিবিম্ব (১৯৪৩), দর্পণ (১৯৪৫), সহরবাসের ইতিকথা (১৯৪৬), চিন্তামণি (১৯৪৬), চিহ্ন (১৯৪৭), আদায়ের ইতিহাস (১৯৪৭), চতুষ্কোণ (১৯৪৮), অহিংসা (১৯৪৮), জীয়ন্ত (১৯৫০), পেশা (১৯৫১), স্বাধীনতার স্বাদ (১৯৫১), সোনার চেয়ে দামী (প্রথম খণ্ড 'বেকার' - ১৯৫১ এবং দ্বিতীয় খণ্ড ' আপোষ' ১৯৫২), ছন্দপতন(১৯৫১), ইতিকথার পরের কথা(১৯৫২), পাশাপাশি (১৯৫২), সার্বজনীন (১৯৫২), আরোগ্য (১৯৫৩), তেইশ বছর আগে পরে (১৯৫৩), নাগপাশ (১৯৫৩), ফেরিওয়ালা (১৯৫৩ ), চালচলন (১৯৫৩), শুভাশুভ (১৯৫৪), হরফ (১৯৫৪), পরাধীন প্রেম (১৯৫৫), হলুদ নদী সবুজ বন (১৯৫৬), প্রাণেরশ্বরের উপাখ্যান (১৯৫৬), মাটি ঘেঁসা মানুষ (১৯৫৭), চাষীর মেয়ে ও কুলির বৌ (১৯৫৭), শান্তিলতা (১৯৬০), মাঝির ছেলে (১৯৬০)।
গল্পগ্রন্থ:-
অতসী মামী ও অন্যান্য গল্প (১৯৩৫), প্রাগৈতিহাসিক (১৯৩৭), মিহি ও মোটা কাহিনী (১৯৩৮), সরীসৃপ (১৯৩৯), বৌ (১৯৪০), সমুদ্রের স্বাদ (১৯৪৩), ভেজাল (১৯৪৪), হলুদপোড়া (১৯৪৫), আজ কাল পরশুর গল্প (১৯৪৬), পরিস্থিতি (১৯৪৬), খতিয়ান (১৯৪৭), ছোট বড় (১৯৪৮), মাটির মাশুল (১৯৪৮), ছোটবকুলপুরের যাত্রী (১৯৪৯), ফেরিওলা (১৯৫৩), লাজুকলতা (১৯৫৪), মাণিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বনির্বাচিত গল্প(১৯৫৬), গল্প সংগ্রহ(১৯৫৭), ছোটদের শ্রেষ্ঠ গল্প(১৯৫৮), উত্তরাকালের গল্প সংগ্রহ(১৯৬৩), কিশোর বিচিত্রা(১৯৬৮)।
প্রবন্ধ সঙ্কলন:
"লেখকের কথা" (১৯৫৭)
জীবন দর্শন ও মৃত্যু:-
সংগ্রামী জীবনের সার্থক রূপকার মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন জীবনে প্রথম পর্বে ফ্রয়েডীয়তত্ত্বে বিশ্বাসী। তাই তাঁর প্রথম দিককার রচনায় মানুষের জটিল মনস্তত্ত্বের বিশ্লেষণ প্রাধান্য পেয়েছেই। পরবর্তীকালে তিনি মার্কসবাদী জীবনদর্শনে আকৃষ্ট হন। তার সাহিত্যেও এই প্রভাব সুস্পষ্ট লক্ষ্য করা যায়। বস্তুত মার্কসবাদই তাকে মধ্যবিত্তসুলভ ভাবপ্রবণতার গণ্ডি থেকে উত্তরণের পথ নির্দেশ করেছিল। তিনি লাভ করেছিলেন প্রশস্ততর বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি।
কাহিনি নির্মাণ ও চরিত্র চিত্রণের বিশিষ্টতায় মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় আধুনিক কথা সাহিত্যের একজন প্রধান স্রষ্টা।তিনি জীবন অন্বেষার সঙ্গে সাহিত্যচর্চাকে সর্বান্তকরণে মিলিয়ে দিয়েছে। মাত্র আটচল্লিশ বছর বয়সে ১৯৫৬ সালের ৩ ডিসেম্বর কঠিন রোগভোগের পর সংগ্রামী জনতার শ্রম ও স্বেদের রূপকার মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যু হয়।
আলোচক – সুশান্ত কর্মকার
এডমিন, সাকসেস বাংলা।
সূত্র:
(১) বাঙ্গালা সাহিত্যের ইতিহাস - সুকুমার সেন
(২) বাংলা সাহিত্য পরিচয় - ডঃ পার্থ চট্টোপাধ্যায়।