নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী :: নীল নির্জনের কবি




নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী : নীল নির্জনের কবি 
••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••
         (১৯ অক্টোবর ১৯২৪ --- এখনও জীবিত)

♦জন্ম : রোমান্টিকতা, প্রেম, প্রকৃতি, মধ্যবিত্ত জীবনের সুখ-দুঃখ, আশা-বেদনা, স্পষ্টবাদী ও স্বদেশপ্রেমের কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ১৯ অক্টোবর, ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে / ২ রা অক্টোবর, ১৩৩১ বঙ্গাব্দে জন্মগ্রহণ করেন।

♦পারিবারিক পরিচয় : তাঁর পিতা জিতেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ছিলেন একজন ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপক। আর মাতা প্রফুল্লনলিনী দেবী ছিলেন একজন পরিপূর্ণ গৃহবধূ।

♦বিখ্যাত কবিতা :- "অমলকান্তি আমার বন্ধু,
ইস্কুলে আমরা একসঙ্গে পড়তাম।
রোজ দেরি করে ক্লাসে আসত, 
পড়া পারত না,শব্দরূপ জিজ্ঞেস করলে
এমন অবাক হয়ে জানলার দিকে 
তাকিয়ে থাকতো যে,
দেখে ভারী কষ্ট হত আমাদের।
আমরা কেউ মাষ্টার হতে চেয়েছিলাম, 
কেউ ডাক্তার, কেউ উকিল।
অমলকান্তি সে সব কিছু হতে চায়নি।
সে রোদ্দুর হতে চেয়েছিল! 
ক্ষান্তবর্ষণ কাক-ডাকা বিকেলের 
সেই লাজুক রোদ্দুর,জাম আর 
জামরূলের পাতায় যা নাকি 
অল্প-একটু হাসির মতন লেগে থাকে।" 
------ "অমলকান্তি" , নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী।

♦পেশা : কবি, সাংবাদিক, শিশু সাহিত্যিক, রহস্য রোমাঞ্চকার, গল্পকার।

♦আত্মপ্রকাশ : মাত্র ৫ বছর বয়সে তিনি প্রথম কবিতা লেখেন। কিন্তু সেটা কোনো পত্রিকায় প্রকাশিত হয়নি। ১৬ বছর বয়স থেকে বিভিন্ন পত্রিকায় তিনি কবিতা লিখে এসেছেন। ১৬ বছর বয়সেই কবিতা লেখার মধ্যে দিয়েই তাঁর প্রথম আত্মপ্রকাশ হয়।

♦ শিক্ষাজীবন : গ্রামের পাঠশালায় প্রথমে তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয়। তারপর কলকাতা এসে প্রথমে কলকাতার বঙ্গবাসী স্কুলে এবং পরে মিত্র ইনস্টিটিউশনে ভর্ত্তি হন। ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে "প্রবেশিকা পরীক্ষা"য় উত্তীর্ণ হন। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গবাসী কলেজ থেকে আই. এ পাশ করেন। ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে সেন্টপলস্ কলেজ থেকে ইতিহাসে অনার্স নিয়ে বি. এ পাশ করেন। ছাত্রাবস্থায় "শ্রীহর্ষ" পত্রিকার সম্পাদনা করে সংবাদপত্রের প্রতি তাঁর নিবিড় ও গভীর অনুরাগের সূত্রপাত হয়।

♣কর্মজীবন : "দৈনিক প্রত্যহ" পত্রিকায় তাঁর সাংবাদিকতার হাতে খড়ি। "সত্যযুগ" পত্রিকার সাংবাদিক রূপে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর তিনি একে একে "মাতৃভূমি", "স্বরাজ", "ভারত", "ইউনাইটেড প্রেস অফ্ ইন্ডিয়া" প্রভৃতি পত্রিকায় কাজ করা শুরু করেন। ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে তিনি "আনন্দবাজার" পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত হন। "বার্তা বিভাগ", "রবিবাসীয় বিভাগ"-এ বেশ কিছুদিন কাজ করার পর তিনি "আনন্দবাজার" পত্রিকার সম্পাদকীয় নিবন্ধকার হন। ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি শিশু ও কিশোর পত্রিকা "আনন্দমেলা"র সম্পাদক হন। তিনি অনেকদিন লেখালেখি বন্ধ করে দিয়েছেন। কিন্তু এখনও তিনি জীবিত আছেন। আজও পাঠকমহলে তাঁর নাম সমাদৃত হয়। বর্তমানে তাঁর বয়স ৯৪ বছর।

♣কর্মজীবন : তিনি মোট ২৯ টি কাব্যগ্রন্থ, ১ টি উপন্যাস, ১ টি আত্মস্মৃতি, ১ টি কাব্যনাট্য, কয়েকটি আলোচনা গ্রন্থ, ভ্রমণকাহিনী, রহস্যকাহিনী, ছোটদের ছড়া ও কবিতা, কবিতাসমগ্র ও নির্বাসিত কবিতা এবং ৩ টি রহস্যকাহিনী সমগ্র রচনা করেন।

♣কাব্যগ্রন্থ :-
১) "নীল নির্জনে" (১৯৫৪ / ১৩৬১)
২) "অন্ধকার বারান্দা" (১৯৬১ / ১৩৬৭)
৩) "প্রথম নায়ক" (১৯৬১ / ১৩৬৭)
৪) "নিরক্ত করবী" (১৯৬৫ / ১৩৭১)
৫) "নক্ষত্র জয়ের জন্য" (১৯৬৯ / ১৩৭৬)
৬) "কলকাতার যীশু" (১৭৬৯ / ১৩৭৬)
৭) "উলঙ্গ রাজা" (১৯৭১)
৮) "খোলা মুঠি" (১৯৭৪ / ১৩৮১)
৯) "কবিতার বদলে কবিতা" (১৯৭৬ / ১৩৮৩)
১০) "আজ সকালে" (১৯৭৮)
১১) "পাগলা ঘন্টি" (১৯৮১ / ১৩৮৭)
১২) "ঘর-দুয়ার" (১৯৮৩)
১৩) "সময় বড় কম" (১৯৮৪ / ১৩৯০)
১৪) "রূপ-কাহিনী" (১৯৮৪ / ১৩৯০)
১৫) "যাবতীয় ভালবাসাবাসি" (১৯৮৬ / ১৩৯২)
১৬) "ঘুমিয়ে পড়ার আগে" (১৯৮৭)
১৭) "জঙ্গলে এক উন্মাদিনী" (১৯৮৯)
১৮) "আয় রঙ্গ" (১৯৯১)
১৯) "চল্লিশের দিনগুলি" (১৯৯৪)
২০) "সত্য সেলুকাস" (১৯৯৫)
২১) "সন্ধ্যারাতের কবিতা" (১৯৯৭)
২২) "অন্য গোপাল" (১৯৯৯)
২৩) "জলের জেলখানা থেকে" (২০০০)
২৪) "সাকুল্যে তিনজন" (২০০০)
২৫) "কবি চেনে সম্পূর্ণ চেনেনা" (২০০১)
২৬)"দেখা হবে" (২০০২)
২৭) "ভালবাসা মন্দবাসা" (২০০৩)
২৮) "মায়াবী বন্ধন" (২০০৪)
২৯) "জ্যোৎস্নায় একেলা" (২০০৬)

♣উপন্যাস :-
১) "পিতৃপুরুষ" (১৯৭৩)

♣আত্মস্মৃতি (আত্মজীবনী মূলক গ্রন্থ) :-
১) "নীরবিন্দু ১" (১৯৯৩)

♣কাব্যনাট্য :-
১) "প্রথম নায়ক" (১৯৬১)

♥আলোচনা গ্রন্থ :-
১) "কবিতার ক্লাস" (১৯৭০)
২) "কবিতার দিকে ও অন্যান্য রচনা" (প্রথম সংস্করণ - ১৯৭৬ , দ্বিতীয় সংস্করণ - ১৯৯২)
৩) "কবিতা কী ও কেন" (১৯৮২)
৪) "সমাজ সংসার" (১৯৮৮)
৫) "বাংলা কী লিখবেন, কেন লিখবেন" (১৯৯১)
৬) "রবীন্দ্রনাথ ও আমরা এবং অন্যান্য রচনা" (২০০১)

♥ভ্রমণকাহিনী :-
১) "গঙ্গাযমুনা" (১৯৮২)
২) "বাইরে দূরে" (১৯৯২)
৩) "আট ঘাটের জল" (১৯৯৩)

♥রহস্যকাহিনী :-
১) "শ্যামনিবাস রহস্য" (১৯৯০)
২) "মুকুন্দপুরের মনসা" (১৯৯১)
৩) "বিষাণগড়ের সোনা" (১৯৯২)
৪) "চশমার আড়ালে" (১৯৯৩)
৫) "রাত তখন তিনটে" (১৯৯৪)
৬) "লকারের চাবি" (১৯৯৫)
৭) "বরফ যখন গলে" (১৯৯৫)
৮) "একটি হত্যার অন্তরালে" (১৯৯৭)
৯) "আড়ালে আছে কালীচরণ" (১৯৯৮)
১০) "পাহাড়ি দিছে" (১৯৯৮)
১১) "আংটি রহস্য" (২০০০)
১২) "জোড়া ভাদুড়ি" (২০০১)
১৩) "শান্তিলতার অশান্তি" (২০০২)
১৪) "কামিনীর কণ্ঠহার" (২০০৩)

♥ছোটদের ছড়া ও কবিতা :-
১) "সাদা বাঘ" (প্রথম সংস্করণ - ১৯৭৯ , প্রথম সৃষ্টি সংস্করণ - ২০০১) 
২) "বিবির ছড়া" (১৯৮২)
৩) "বারো মাসের ছড়া" (১৯৮৮)
৪) "ও কলকাতা" (১৯৯১)
৫) "ডাইনোসর" (১৯৯১)
৬) "ভোরের পাখি" (২০০০)
৭) "নদীনালা গাছপালা" (২০০১)
৮) "ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি" (২০০২)
৯) "বারো পাখির ছড়া" (২০০৩)
১০) "খোকনের খাতা" (২০০৩)
১১) "ছোটদের ছড়া" (২০০৩)
১২) "বারো পুতুলের ছড়া" (২০০৪)
১৩) "মায়ের কাঁথা" (২০০৫)
১৪) "পাঁচ বছরের আমি" (২০০৫)
১৫) "ছেলেবেলা" (২০০৬)
১৬) "দাশুর কথা" (২০০৬)
১৭) "রাত-পাহাড়া" (২০০৬)

♥কবিতাসমগ্র ও নির্বাসিত কবিতা :-
১) "শ্রেষ্ঠ কবিতা" (১৯৭০)
২) "কবিতাসমগ্র ১ম" (১৯৮২)
৩) "কবিতাসমগ্র ২য়" (১৯৮৫)
৪) "নির্বাচিত কবিতা" (১৯৯২)
৫) "কবিতাসমগ্র ৩য়" (১৯৯৪)
৬) "কবিতাসমগ্র ৪থ" (২০০০)
৭) "কবিতাসমগ্র ৫ম" (২০০০)

♥রহস্যকাহিনী সমগ্র :-
১) "ভাদুড়ি সমগ্র ১ম" (২০০৬)
২) "ভাদুড়ি সমগ্র ২য়" (২০০৬)
৩) "ভাদুড়ি সমগ্র ৩য়" (২০০৬)

♠সৃষ্ট গোয়েন্দা চরিত্র :-
প্রাপ্তবয়স্কদের জন্যে কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর সৃষ্ট গোয়েন্দা চরিত্রের নাম হল "ভাদুড়ী মশাই"।

♠ পুরস্কার ও সম্মাননা :-
১) ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে : "উল্টোরথ পুরস্কার"।
২) ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে : "তারাশঙ্কর স্মৃতি পুরস্কার"।
৩) ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে : "উলঙ্গ রাজা" (১৯৭১) কাব্যগ্রন্থের জন্য "সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার"। এছাড়াও এই একই খ্রিস্টাব্দে তিনি লাভ করেন "বর্ষশ্রেষ্ঠ পুরস্কার"।
৪) ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে : "আনন্দ শিরমণি"।
৫) ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে : "স্বর্ণাঞ্চল পুরস্কার"।
৬) ২০১০ খ্রিস্টাব্দে : কথাসাহিত্যে অবদানের জন্য "বিদ্যাসাগর পুরস্কার"।
৭) ২০১৭ খ্রিস্টাব্দে : পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকে কবি সাহিত্যিক নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী "বঙ্গবিভূষণ" সম্মানে ভূষিত হয়েছেন।

♠উৎসর্গীকৃত কয়েকটি কাব্যগ্রন্থ :-
১) "নক্ষত্র জয়ের জন্য" (১৯৬৯ / ১৩৭৬) - সঞ্জয় ভট্টাচার্যকে। 
২) "কলকাতার যীশু" (১৯৬৯ / ১৩৭৬) - শ্রী রমাপদ চৌধুরীকে। 
৩) "উলঙ্গ রাজা" (১৯৭১) - প্রশান্ত কুমার বসুকে। 
৪) "খোলা মুঠি" (১৯৭৪ / ১৩৮১) - পুরবীকে। 
৫) "আজ সকালে" (১৯৭৮) - শীলা ও গৌরকিশোর ঘোষকে। 
৬) "পাগলা ঘন্টি" (১৯৮১ / ১৩৮৭) - অরুণ কুমার মিত্রকে। 
৭) "ঘর-দুয়ার" (১৯৮৩) - শ্রীমতি গীতা ও শিবনারায়ণ রায়কে। 
৮) "সময় বড় কম" (১৯৮৪ / ১৩৯০) - ঋতু ও বুদ্ধদেব বসুকে। 
৯) "রূপ-কাহিনী" (১৯৮৪) - স্বাতী ও সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে। 
১০) "যাবতীয় ভালবাসাবাসি" (১৯৮৬ / ১৩৯২) - রীক্তা ও সুপ্রিয়কে। 
১১) "ঘুমিয়ে পড়ার আগে" (১৯৮৭) - ত্রুডবার্ত ও আলোকরঞ্জন দাশগুপ্তকে। 
১২) "জঙ্গলে এক উন্মাদিনী" (১৯৮৯) - আলপনাকে। 
১৩) "আয় রঙ্গ" (১৯৯১) - গায়িত্রী ও হীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়কে। 
১৪) "চল্লিশের দিনগুলি" (১৯৯৪) - বিমল কুমার ভট্টাচার্য ও ললিত কুমার মুখোপাধ্যায়কে। 
১৫) "সত্য সেলুকাস" (১৯৯৫) - শ্রাবণী ও প্রনবকে। 
১৬) "সন্ধ্যারাতের কবিতা" (১৯৯৭) - শ্রীমতি নির্মলা সান্দ্যনিকে। 
১৭) "অন্য গোপাল" (১৯৯৯) - মৈত্রেয়ী ও পবিত্র মুখোপাধ্যায়কে। 
১৮) "জলের জেলখানা থেকে" (২০০০) - ভবাণীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়কে। 
১৯) "দেখা হবে" (২০০২) - সোনালী গঙ্গোপাধ্যায়কে।

♠কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাবলী :-

১) মাত্র ৩০ বছর বয়সে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ "নীলনির্জন" ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে / ১৩৬১ বঙ্গাব্দে "সিগনেট প্রেস"-এ প্রকাশিত হয়। এই কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে তিনি পাঠকমহলে কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন।

২) কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ছিলেন রোমান্টিকতা, প্রেম, প্রকৃতি, মধ্যবিত্ত জীবনের সুখ-দুঃখ, আশা-বেদনা, স্পষ্টবাদী ও স্বদেশপ্রেমিক কবি।

৩) কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ঘৃণা করতেন মেকি দেশপ্রমকে।

৪) কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর কবিতার ভাষা আধুনিক কবিদের মতো দুর্বোধ্য নয়।

৫) বিষ শতকে চল্লিশের দশকে রাজনৈতিক উত্তাপ যখন ঘনীভূত কবি তাঁর কবিতায় তখন আশার গান শুনিয়েছেন।

৬) কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার সমালোচনা করেছেন।

৭) কবিতার মাঝে মাঝে তাঁর গল্প বলার প্রবণতা দেখা যায়। বিষয় উপস্থাপনার মাধ্যমে কবিতাকে অন্যমাত্রা দেয়া, ভাবগত ব্যঞ্জনাকে অক্ষুণ্ণ রেখে কবিতায় বর্ণিত চরিত্রকে উচ্চারণের দ্যোতনায় অর্থময় করে তোলা তাঁর এমনই কয়েকটি কবিতা হল :- "অমলকান্তি" , "কলকাতার যীশু" , "বাতাসী" , "শকুন" , "পূর্ব গোলার্ধের প্রেম" , "নিয়ন মণ্ডলে" , "এসপার-ওসপার" , "অন্ধকারে" , "চৌরাস্তায়"।

৮) কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী গদ্যছন্দের ব্যবহার নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা, ৩৩ পংক্তির কবিতা রচনা করেছেন।

৯) কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর প্রথমদিকের রচনায় জীবনানন্দ দাশের প্রভাব আছে।

১০) আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের ছবি কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী সহজ সরল ভাষায় পরিস্ফুট করেছেন।

১১) "মানুষের ওপর অগাধ বিশ্বাস, সমস্তরকম ভণ্ডামি ও কুসংস্কারকে ভেঙে তছনছ করে দেবে মানুষই" - এই ভাবনায় তিনি লেখেন : "একদিন এইসব হবে, তাই" কবিতা। কবিতাটির লাইন :-

"একদিন সমস্ত ধর্মযাজকদের উর্দি কেড়ে নিয়ে 
নিষ্পাপ বালক বলবে হা হা।"

১২) স্পষ্টবাদী কবি আত্মসমীক্ষায় ব্রতী হয়ে  "কলকাতার কড়চা" কবিতায় লিখেছেন, "তুমি তিলোত্তমা হওনি, আমরাই তিলে তিলে ছোট হয়ে গেছি।"

১৩) শীতল চৌধুরী তাঁর "আধুনিক বাংলা কবিতার নিবিড় পাঠ" গ্রন্থে বলেছেন, "কবি নীরেন্দ্রনাথের কবিতার বিশেষত্ব হল সহজ সরল জলের মতন পাঠকের অন্তরগহনে তিরতির করে ঢেউ তোলে। তিনি গদ্যের কথ্যভাষায় স্পষ্ট ছবি গেঁথে গেঁথে আপন মনের একতারাতে সুর তুলে কবিতাকে তরতর করে নদীর স্রোতের মতন এঁকে নিয়ে যান।"

১৪) ড. বাসন্তীকুমার মুখোপাধ্যায় তাঁর "আধুনিক বাংলা কবিতার রূপরেখা" গ্রন্থে বলেছেন, "নীরেন্দ্র চক্রবর্তীর সুতাংশুকে জীবনানন্দ দাশের 'আট বছর একদিন আগের কবিতা'য় নায়কের উত্তর পুরুষ বলে মনে হবে। জীবনানন্দের নায়কের মৃত্যুটাকেই যেন অনুজ কবি বিশ্লেষণ করে অনুভব করতে পারছেন।"

১৫) কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর ভাবনা - "মানুষের মধ্যেই ঈশ্বরকে খোঁজা ও মানুষের সারল্যের মধ্যেই ঈশ্বরের প্রকাশ উপলব্ধি।"

১৬) অভিজ্ঞতার দীর্ঘপথ হেঁটে কবি নিজেও অন্ধকার ঠেলে আলোর দিকে যাবার কথা বলেছেন। এই দীপ্ত বিশ্বাসেই আত্মসচেতন কবি নীরেন্দ্রনাথ বাংলা কাব্যভূমিতে এখনও অনুভূতির পুষ্পবৃষ্টি করে তুলেছেন।

১৭) তিনি তাঁর "অনন্ত গোধূলিবেলা" কবিতাটি উৎসর্গ করেন সোনালী বন্দ্যোপাধ্যায় ("সে আছে অন্তরালে")-কে।

১৮) কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীই প্রথম "টিনটিন" চরিত্রের বঙ্গানুবাদ করেছেন। 

১৯) প্রাপ্তবয়স্কদের জন্যে তার সৃষ্ট গোয়েন্দা চরিত্রের নাম হল "ভাদুড়ী মশাই"।

২০) তিনি এখনও জীবিত রয়েছেন। তাঁর কবিতাগুলি আজও পাঠকমহলে অনেক সমাদৃত হয়। এইজন্য তিনি "সাহিত্য আকাদেমি"র পাশাপাশি অনেক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তাঁর এখন বর্তমান বয়স হল ৯৪ বছর। 

♠তথ্যসূত্র : ১) "আধুনিক বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস" --- অধ্যাপক শ্রীতপন কুমার চট্টোপাধ্যায়। 
২) "বাংলা সাহিত্যপরিচয় ও সাহিত্যটীকা" --- অধ্যাপক শ্রীপার্থ চট্টোপাধ্যায়।

●আলোচকসৌম্যমাইতি।
● অ্যাডমিন।
●Success বাংলা"

Share this