কাব্যনাট্য ও নাট্যকাব্য


কাব্যনাট্য ও নাট্যকাব্য


♦কাব্যনাটক:--

কাব্যনাটক হচ্ছে কবিতা ও নাটকের সংমিশ্রণে পাওয়া সমন্বিত শিল্প। যে নাটকের অন্তর গীতিকবিতার সুরমূর্ছনায় ঝংকৃত হয় এবং চরিত্রসমূহের সংলাপে কবি-মানসের বিচিত্র ভাব-কল্পনার প্রকাশ ঘটে, সহজ কথায় তাই কাব্যনাটক।    


♦কাব্যনাটকের বৈশিষ্ট্য:-- 

(১) এ ধরনের নাটকে কবির কল্পনা-আবেগ-উচ্ছ্বাস বহুবর্ণিল রঙের উজ্জ্বল আলোকছটায় একক রূপ লাভ করে এবং অনেক সুরও একটি ঐক্যতানের সৃষ্টি করে। 

(২)তবে এ ধরনের নাটকে সাধারণ নাটকের মতো গতিময়তা এবং ঘটনার যৌক্তিক বিন্যাস ও কার্যকারণ আবিষ্কৃত নাও হতে পারে। কাব্যনাটকে চরিত্রসমূহের অন্তর্গত চিন্তা-চেতনা কবি গভীরভাবে বিশ্লেষণ সাপেক্ষে কবিতার মায়াজাল রচনা করেন; ফলে কাব্যনাটকে সামগ্রিক ঘটনা-বিশ্লেষণ ধারাবাহিক পরম্পরায় নাও ঘটতে পারে।

(৩)নাট্যরসের পরিণামের দিকে মনোসংযোগ না করেই নাট্যকার কাহিনীর বিচ্ছিন্ন শতছিন্ন অংশগুলোকে ভাব-কল্পনার অজস্র ধারায় প্রবাহিত করতে পারেন।   

(৪)কাব্যনাটকে গীতিকবিতার আবেগ-উচ্ছ্বাসজনিত নাট্যিক দুর্বলতা থাকাও অস্বাভাবিক নয়। কেননা কাব্যনাটক রচনার ক্ষেত্রে নাট্যকার প্রত্যক্ষভাবে চরিত্রের মনোজগত বিশ্লেষণের সময় উপস্থিত থাকেন বলে, এখানে ‘লিরিক’-এর প্রাধান্য থেকেই যায়।

(৫)বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কাব্যনাটকের পরিসমাপ্তি সন্তোষজনক হয় না। কেননা এখানে নাট্যকারের প্রধান লক্ষ্য থাকে, চরিত্রের অন্তর্রহস্য উদ্ঘাটন করে দর্শক-পাঠকের সামনে উপস্থাপন করা।

:নাট্যকাব্য:
     নাট্যআঙ্গিকে লেখা কবিতাই নাট্যকবিতা বা নাট্যকাব্য।এর বিষয়ে নাটকীয়তা থাকে সামান্য কিন্তু কাব্যময়তার পরিমাণ বেশি।কিছু কিছু ক্ষেত্রে সংলাপধর্মীতা এর একমাত্র নাট্যলক্ষণ হয়ে থাকে।

বৈশিষ্ট্য:- 
(১)নাট্যকাব্যে নাটকের তুলনায় কাব্যগুণ বেশি থাকে।
(২)নাট্যকাব্য পাঠের জন্য লেখা হয়।
(৩)নাট্যকাব্যে conflict- এর যে রূপ দেখা যায় তা মূলত অন্তর্সংঘাত।
(৪) নাট্যকাব্যে বর্ণনার আধিক্য দেখা যায়।
(৫)নাট্যকাব্যে ভাব ও আবেগের প্রাধান্য রয়েছে বলে সংলাপ দীর্ঘহয়।
(৬)এটি কাব্যশ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত বলে অলংকরণ চাতুর্য বেশি থাকে।
(৭) নাট্যকাব্য objective form of poetry তাই নিজের বক্তব্য চরিত্রের মাধ্যমে প্রকাশ করে।

   উদাহরণ:--- 
   রবীন্দ্রনাথের 'কর্ণকুন্তীসংবাদ', 'গান্ধারীর আবেদন' এছাড়া বুদ্ধদেব বসুর ' সংক্রান্তি'  পুর্নেন্দু পত্রীর  'আমরা আবহমান ধ্বংসে ও নির্মাণে' প্রভৃতি।


'কাব্যনাট্য' ও 'নাট্যকাব্য' এই দুটি বিষয় নিয়ে সমালোচকদের মনে দ্বন্দ্ব রয়েছে তবু ও নিম্নে কয়েকটি মূলগত পার্থক্য দেখিয়ে বিষয়টি বোঝানো হল:--

(১)নাট্যকাব্য, নাট্যআধারে রচিত হলেও কাব্যময়তার আধিক্যে নাট্যকাব্য আসলে কাব্য। কাব্যনাট্য কবিতার আধারে রচিত হলেও এটি একপ্রকারের নাটক।

(২) নাট্যকবিতা বা নাট্যকাব্য গীতিকবিতার সমধর্মী।অভিনয়ের জন্য নয়,পড়ার জন্য লেখা হয়।
কাব্যনাট্য নাট্যধর্মী রচনা, অভিনয়ের জন্য লেখা হয়।

(৩)নাট্যকাব্যে নিজের বক্তব্য চরিত্রের মাধ্যমে প্রকাশ করলেও কবি নিজেকে গোপন পারেন।
কাব্যনাট্য poetic drama তাই কাব্যের চরিত্রের সঙ্গে অন্তরঙ্গ ভাবে মিশলেও  কবি নিজেকে নিরাসক্ত দর্শক করে রাখতে পারেন।

(৪)নাট্যকাব্যে অন্তর্সংঘাত বা বহি:সংঘাত থাকে না, কিন্তু কাব্যনাট্যে এই বিষয়টি থাকে।

(৫)নাট্যকাব্যের সংলাপ আকারে দীর্ঘ হতে পারে, কিন্তু কাব্যনাট্যের সংলাপ আকারে ছোট হয়ে থাকে।

(৬)নাট্যকাব্য কাব্যশ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত হলেও এর কাব্যময়তা, অলংকরণ চাতুর্য এর আবেগময়তা কাব্যনাট্যের তুলনায় কিছুটা বেশি থাকে।


সুব্রত সরকার।
গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়।
মডারেটর সাকসেস বাংলা।।

Share this