সাহিত্যের সব্যসাচী বুদ্ধদেব বসু


সাহিত্যের সব্যসাচী বুদ্ধদেব বসু
==========================
     যিনি সর্ব প্রথম দৃঢ়তার সঙ্গে রবীন্দ্র ভাবাদর্শের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে নতুন কাব্য সাধনার বীজ বপন করেছিলেন তিনি হলেন বুদ্ধদেব বসু। বুদ্ধদেব বসু আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা, যুগস্রষ্টা কবি, নাট্যকার, বিশ্বসাহিত্যের অনুবাদক, ঔপন্যাসিক ও প্রাজ্ঞ প্রবন্ধকার।  শুধু তাই নয়, তিনি রবীন্দ্রোত্তর যুগের বাঙালির মননচর্যা ও নন্দনভাবনার উজ্জ্বলতম প্রতিভু। তিনি ছিলেন সেইসব বৈশ্বকোষিক লেখকদের একজন, রবীন্দ্রনাথের পরে এদেশে যাঁরা বিরলপ্রজাতির পাখির মতো দুর্লভ। রবীন্দ্রনাথের রচনাসম্ভারের বিপুলতার সাথে যদিও তুলনা চলে না, তবু নেহাৎ কম নয় বুদ্ধদেব বসু-র সৃষ্টি। অবিরল ধারায় লিখেছেন তিনি, স্বতঃউৎসারে, গদ্যে-পদ্যে, বাংলায়-ইংরেজিতে; ব্যাখ্যা করেছেন নন্দনতত্ত্ব; লিখেছেন মহাভারতের নবতর ব্যাখ্যা; কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক ভাষাতত্ত্ব বিভাগ প্রতিষ্ঠা করে তা লালন করেছেন; অসামান্য সব কাব্যনাট্যে বিধৃত করেছেন তাঁর জীবনভাবনা। তাঁর বোদলেয়ার-অনুবাদ অসম্ভব প্রভাবসম্পাতী হয়েছিল, এবং পঞ্চাশ-ষাটের দশকে এই বাংলাদেশের তরুণ কবিদেরও আঁখি হ’তে ঘুম কেড়ে নিয়েছিলো; 
     কল্লোল যুগের প্রেমেন্দ্র মিত্র, অচিন্ত সেনগুপ্ত ও বুদ্ধদেব বসু সাহিত্য জগতে বন্ধুত্রয়ী বলে পরিচিত হয়েছিলেন। বন্ধুত্রয়ীর মধ্যে বুদ্ধদেব বসুই ছিলেন কনিষ্ঠতম।  বাংলা সাহিত্যের এই বিখ্যাত সব্যসাচী ও কল্লোল যুগের অন্যতম প্রতিনিধি বুদ্ধদেব বসু ১৯০৮ সালের ৩০ নভেম্বর কুমিল্লায় জম্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস ছিল বিক্রমপুরের মালখানগর গ্রামে। তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কৃতি ছাত্র। ঢাকার এক প্রসিদ্ধ মাসিকপত্রে তাঁর প্রথম কবিতা 'যাত্রী' প্রকাশিত হয়। ছাত্র জীবনে ও সাহিত্য জীবনের শুরুতে বুদ্ধদেব বসুর সতীর্থ, অন্তরঙ্গ সহযোগী অজিত দত্তের ও বুদ্ধদেব বসুর যুগ্ম-সম্পাদনায় 'প্রগতি' পত্রিকা প্রকাশিত হয়। তিনি জানিয়েছেন- " কেবল রচনা সম্ভার সংগ্রহ ও সম্পাদনেই নয়, পত্রিকা প্রকাশে, দুজনেরই আর্থিক দায়িত্ব'-ও ছিল।"  এই সময়ই তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'মর্মবাণী'(১৯২৫) প্রকাশিত হয়। 'মর্মবাণী'র কবিতা গুলিতে রবীন্দ্র প্রভাব সুস্পষ্ট লক্ষ্য করা যায়। ১৯৩৫ সাল থেকে ত্রৈমাসিক ‘কবিতা’ পত্রিকা সম্পাদনা করেন। তিন বছর তার সঙ্গে সম্পাদনায় ছিলেন কবি সমর সেন। ২৫ বছরের বেশি সময় ধরে পত্রিকাটির ১০৪টি সংখ্যা প্রকাশিত হয়। পত্রিকাটি আধুনিক বাংলা কাব্যান্দোলনে নেতৃত্ব দেয়। ১৯৩৮ সালে হুমায়ুন কবিরের সঙ্গে ত্রৈমাসিক চতুরঙ্গ সম্পাদনা করেন। ১৯৪২ সালে ফ্যাসিবাদবিরোধী লেখক ও শিল্পী সংঘ আন্দোলনে যোগদান করেন। রবীন্দ্রোত্তর আধুনিক কাব্য ধারার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বুদ্ধদেবের অবদান উল্লেখযোগ্য।
রচনা সম্ভার:- সমকালীন সাহিত্য-শিল্পীদের মধ্যে বুদ্ধদেব বসু ছিলেন সবচেয়ে বিচিত্রকর্মা, রবীন্দ্রনাথের পর তিনিই প্রথম যিনি সাহিত্যের সকল শাখায় বিচরণ করেছেন।। কবিতা, উপন্যাস, ছোটগল্প, নাটক, প্রবন্ধ,  সমালোচনা, অনুবাদ, সম্পাদনা, স্মৃতিকথা, ভ্রমণসাহিত্য, শিশুসাহিত্য বিবিধ প্রকোষ্ঠে ছিল তাঁর অক্লান্ত ও অবিরল বিচরণ।।
■ রচনাসমূহ ■ 
কাব্যগ্রন্থ:- বুদ্ধদেব বসু অল্প বয়স থেকেই কবিতা রচনায় রত ছিলেন। ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে এই কিশোর কবির  কবির প্রথম কবিতাগ্রন্থ প্রকাশিত হয় 'মর্মবাণী' নামে। এছাড়াও তাঁর অন্যান্য কাব্যগ্রন্থ গুলি হল- বন্দীর বন্দনা (১৯৩০), একটি কথা (১৯৩২), পৃথিবীর পথে (১৯৩৩), কঙ্কাবতী (১৯৩৭),   নতুন পাতা(১৯৪০), ২২ শে শ্রানণ (১৯৪২), এক পয়সার একটি(১৯৪২), দময়ন্তী (১৯৪৩), দ্রৌপদীর শাড়ি (১৯৪৮), শ্রেষ্ঠ কবিতা (১৯৫৩), শীতের প্রার্থনা : বসন্তের উত্তর (১৯৫৫), যে আঁধার আলোর অধিক (১৯৫৮), দময়ন্তী : দ্রৌপদীর শাড়ি ও অন্যান্য কবিতা (১৯৬৩), মরচেপড়া পেরেকের গান (১৯৬৬), একদিন : চিরদিন ও অন্যান্য কবিতা (১৯৭১),  স্বাগত বিদায় ও অন্যান্য কবিতা (১৯৭১)।

ঋণ স্বীকারঃ
[১] বাঙ্গালা সাহিত্যের ইতিহাস(পঞ্চম খণ্ড) - সুকুমার সেন।
[২] বাংলা সাহিত্যের ইতিকথা(চতুর্থ পর্যায়) - শ্রীভূদেব চৌধুরী।
[৩] বাংলা সাহিত্যের সম্পূর্ণ ইতিবৃত্ত - অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়।

আলোচক  সুশান্ত কর্মকার
(অ্যাডমিন, সাকসেস বাংলা,
লক্ষ্মীসাগর, বাঁকুড়া)

Share this