প্রেমচন্দ মুন্সী



প্রেমচন্দ মুন্সী
     বিংশ শতাব্দীর জনপ্রিয় হিন্দি ও উর্দু ভাষার অন্যতম সফল সাহিত্যিক মুন্সি প্রেমচাঁদ। মুন্সী প্রেমচাঁদ উর্দু ও হিন্দি সাহিত্যের স্বনামধন্য কথাশিল্পী। তার আসল নাম ধনপত রায়। তবে মুন্সী প্রেমচাঁদ নামেই তিনি অধিক পরিচিত। তাঁকে জীবনবাদী সাহিত্যিক বলা হয়। হিন্দি সাহিত্যে ‘উপন্যাস-সম্রাট’ হিসেবে খ্যাত প্রেমচাঁদকে আধুনিক হিন্দি সাহিত্যের জনক বলেও অভিহিত করা হয়। তাই অনেকেই তাঁকে হিন্দির বঙ্কিম বলেও অভিহিত করে থাকেন। 1910 সালে বড়ে ঘরকী বেটি প্রকাশিত হলে উর্দু সাহিত্যে তিনি স্থায়ী আসন লাভ করেন।1916 সালে প্রকাশিত তার সর্বশ্রেষ্ঠ উপন্যাস 'গোদান' । তাঁর প্রায় যাবতীয় সাহিত্যকর্ম বাংলা ও অন্যান্য ভাষায় অনূদিত হয়েছে
জন্ম:
     ১৮৮০ সালের ৩১ সে জুলাই উত্তর প্রদেশের বারানসীর নিকটবর্তী লমহী গ্রামে প্রেমচন্দ জন্মগ্রহণ করেন। পিতা আজায়ব রায় এবং মাতা আনন্দী দেবী। তাঁর পিতৃদত্ত নাম ছিল ধনপত রায় শ্রীবাস্তব। তাঁর কাকা নাম রাখেন নবাব রায়।  তবে তিনি প্রেমচন্দ নাম নিয়ে সাহিত্য জগতে প্রবেশ করেন  এবং এই নামেই সমধিক পরিচিতি লাভ করেন। 
সাহিত্য জীবন: 
    বহামীরপুর জেলার শিক্ষা বিভাগের সাব-ডেপুটি ইন্সপেক্টর হিসাবে সরকারী চাকুরি করার সময় উর্দু ভাষায় নবাব রায় ছদ্মনামে তাঁর প্রথম গল্প গ্রন্থ " সোজ-এ-ওঅতন"- ("দেশ মাতার বিষাদ সংগীত") প্রকাশিত হয়। এই গল্প গুলির মধ্যদিয়ে প্রেমচন্দ রাজনৈতিক স্বাধীনতার সংগ্রামে ভারতীয়দের অনুপ্রাণিত করতে চেয়েছিল। ব্রিটিশ সরকারের হুকুমে বইটি বাজেয়াপ্ত হয়। তিনি নবাব রায় নাম টি বর্জন করেন চির দিনের জন্য । 
উপন্যাস:
     কানপুরে "জমানা"পত্রিকার সম্পাদক দয়া নারায়ণ নিগমের সহায়তায় মুন্সি প্রেমচন্দ নামে লেখক হিসাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। প্রেমচন্দের প্রথম উপন্যাস উর্দু ভাষায় লেখা "আসরারে ময়াবিদ উর্ফ দেবস্থান রহস্য"।  উপন্যাসটি  'আওয়াজ-ই-খল্ক' নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকায় ১৯০৩ খ্রিস্টাবের ৮ অক্টোবর থেকে ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ১ ফেব্রুয়ারি  পর্যন্ত ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হয়। তাঁর দ্বিতীয় উপন্যাস 'হমখুর্মা ও হমসবাব'।  এই উপন্যাসটিই 'প্রেমা' নামে ১৯০ সালে হিন্দিতে প্রকাশিত হয়। ১৯১৮ খ্রিঃ 'সেবাসদন' প্রকাশিত হলে হিন্দি সাহিত্যে তিনি স্থায়ী আসন লাভ করেন। এর পর একে একে তাঁর বিখ্যাত সব উপন্যাস রচিত হতে থাকে। তাঁর উল্লেখযোগ্য উপন্যাস গুলি হল-  সেবা সদন(1918), বরদান(1912), প্রেমাশ্রম(1922), রঙ্গভূমি(1925), কায়া-কল্প (1926), নির্মলা(1928), গবন(1931), কর্ম-ভূমি(1932), গো -দান(1936) এবং একটি অসমাপ্ত উপন্যাস "মঙ্গল-সূত্র"
ছোটগল্প:
     ছোটগল্পকার হিসাবেও প্রেমচন্দ যথেষ্ট কৃতিত্ব দেখিয়েছে। উর্দু ভাষায় নবাব রায় ছদ্মনামে তাঁর প্রথম গল্প গ্রন্থ " সোজ-এ-বতন" ১৯০৭ সালে প্রকাশিত হয়। এই গল্পগ্রন্থের প্রথম গল্প 'দুনিয়া কা সবসে আনমোল রতন' তাঁর প্রথম হিন্দি গল্প 'সৌত' প্রকাশিত হয় ১৯১৫ সালে। 
* প্রেমচন্দের বেশির ভাগ গল্পে নিম্ন-মধ্যবৃত্ত সাধারণ মানুষের কাহিনি চিত্রিত হয়েছে। ডঃ কমলকিশোর গোয়েঙ্কা প্রেমচাঁদের সমগ্র গল্প "প্রেমচাঁদ গল্প রচনাবলী নামে প্রকাশ করেন প্রেমচন্দ প্রায় তিনশো টি গল্প লিখেছেন। সেগুলি গ্রন্থিত হয় প্রথম গল্প সংকলন "সোজ-এ-ওঅতন"  থেকে আরম্ভ করে হিন্দি "সপ্ত-সরোজ", "নও-নিধি, "বড়ে ঘর কী বেটী", " প্রেম-পচীশী", "প্রেম-প্রসূন", "প্রেমতীর্থ', "প্রেম-চতুর্থী ", "পঞ্চ ফুল", "অগ্নি-সমাধি", "সুপ্ত-সুমন", 'প্রেম -পঞ্চমী' প্রভৃতি গ্রন্থ এ। 
নাটক: 
     প্রেমচাঁদ বেশ কয়েকটি নাটকও লিখেছিলেন। সে গুলি হল 'সংগ্রাম'(১৯২৩), কর্বলা(১৯২৪), প্রেম কি দেবী(১৯৩৩), 'তজুর্বা, 'রুহানী সাদি' প্রভৃতি। তবে গল্পকার ও ঔপন্যাসিক হিসাবে তিনি যতটা সফল্য অর্জন করতে পেরেছিলেন  নাট্যকার হিসাবে তিনি ততটা সাফল্য পান নি 
প্রবন্ধ:
     প্রেমচন্দ কেবল একজন অনুভুতিশীল সফল গল্পকারই ছিলেন না, তিনি কয়েকটি পত্রিকাও সম্পাদনা করেছিলেন। তিনি 'হংস', 'মাধুরী', 'জাগরণ' প্রভৃতি পত্রিকার সম্পাদনা করেছিলেন।  তারপর অন্যান্য  ককিছু সহযোগী সাহিত্য পত্রিকা 'চাঁদ ',' মর্যাদা ','স্বদেশ' প্রভৃতি তে তার সাহিত্যিক ও সামাজিক ভবনা প্রবন্ধের মাধ্যমে  প্রকাশ ঘটান। প্রেমচন্দের লেখা কয়েকটি প্রবন্ধ গ্রন্থ হল 'কুচ বিচার',  'কলম ত্যাগ অর তলবার'। তাঁর জনপ্রিয় প্রবন্ধগুলি সাহিত্যের উদ্দেশ্য, পুরাতন সময় নতুন যুগ, স্বরাজের সুবিধা, কাহিনি কলা, হিন্দি-উর্দু ঐক্য, মহাজনী সভ্যতা , উপন্যাস, জীবনে সাহিত্যের স্থান প্রভৃতি।
অনুবাদগ্রন্থ:
     প্রেমচাঁদ সফল অনুবাদকও ছিলেন। তিনি  লিও টলস্টয়, অস্কার ওয়াইড, চার্লস ডিকেন্স,  প্রভৃতির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে অনুবাদ কর্মে প্রবৃত্ত হন। প্রেমচন্দের অনূদিত গ্রন্থ গুলি হল---
১) 'অহংকার' (আনাতোল ফ্রঁস এর 'Thaïs ' অনুবাদ)
২) 'আজাদ কথা' (রতন নাথ ধর সারশার এর 'ফাসানা-ই আজাদ' এর অনুবাদ )
২) 'প্রভাত যাত্রা' (রতন নাথ ধর সারশার এর 'সার-ই-কশর' এর অনুবাদ)
৩) রুপোর বাক্স (The Silver Box -John Galsworthy)
৪) 'ধর্মঘট' (Strife-John Galsworthy)
৬) 'ন্যায়' (Justice - John Galsworthy)
৭) সুখদাস (Silas Marner - George Eliot)
৮) "টলস্টয়ের কাহিনী" (লিও টলস্ট)

সৌজন্যে : সাকসেস বাংলা

Share this